কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপরতা জোরদার করেছেন। এতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে দলীয় মনোনয়ন যিনিই পাননা কেন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন এমন প্রত্যাশা নেতৃবৃন্দের। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ আরো বেড়ে গেছে। জেলার ৪টি আসনেই ব্যাপকভাবে গনসংযোগ করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে কোন প্রতিযোগীতা নেই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ডঃ আশরাফুল ইসলাম সজীব ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম। এদিকে বিএনপিতে কোন প্রতিযোগীতা নেই। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না পারলে তার সহধর্মীনি সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমদ প্রার্থী হবেন এটা নিশ্চিত। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ ইলিয়াছের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির শীর্ষনেতা মোশারফ হোসেন দুলাল। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তেমন তৎপরতা না থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্থানীয় একাধিক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম এর কিছু বির্তকিত কর্মকান্ডের কারণে দলের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষন্ন হয়েছে। এরপরও কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান সুসংহত।
কক্সবাজার-২ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেগা প্রকল্পের কারণে দেশে আলোচিত আসনে পরিণত হয়েছে। মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় গত ৪ বছরে মেগা প্রকল্প ছাড়া অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় যোগাযোগ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সংসদ সদস্যের ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে নেতাকর্মীরা রয়েছে উজ্জিবীত। আগামি নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন এমনটি নিশ্চিত করেছেন বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন এমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একটি সুত্র। তিনি প্রতিদিন মহেশখালী কিংবা কুতুবদিয়ায় কোন না কোন কর্মসূচীতে যোগ দিচ্ছেন। গত নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হামিদুর রহমান আজাদ নির্বাচিত হলেও তিনি এলাকার সাথে যোগাযোগ না রাখায় উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ে এই দুই উপজেলা। এ ছাড়া আরো যারা দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডঃ সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডঃ ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, ডঃ আনচারুল করিম ও ওসমান গণী। এই আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যেও রয়েছে প্রতিযোগীতা। মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদ বিএনপি থেকে বহিস্কৃত এমন দাবী জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের। তবে তিনি দাবী করেছেন, কেন্দ্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন মহেশখালী উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক আবু বক্কর ছিদ্দিক, জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন দাবী করছেন সাবেক সাংসদ জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদ। এদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন দাবী করে ব্যাপক গনসংযোগ করে যাচ্ছেন মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ।
কক্সবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগের একাধীক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন, তবে বিএনপিতে রয়েছেন একক প্রার্থী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা আহমদ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। এই আসনে বিএনপি স্বস্থিতে নেই জামায়াত নিয়ে। বিএনপিকে ঠেকাতেই ব্যস্ত জামায়াত নেতাকর্মীরা। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সাথে সু-সম্পর্ক রেখে জামায়াত নির্বিঘেœ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। জেলা জামায়াতে সেক্রেটারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ এর বিরুদ্ধে মন্দির পুড়ানো, নাশকতাসহ একাধিক মামলার অভিযোগপত্র গ্রহন করা হলেও তিনি নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই আসনে একক প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রিয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল ইতোমধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা আরো জোরদার করেছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন এডঃ মোহাম্মদ তারেক।
কক্সবাজার-৪ আসনে বর্তমান সংসদ আবদুর রহমান বদি কয়েকটি কারণে বিতর্কিত হলেও তিনিই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শীর্ষে রয়েছেন। এ ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোঃ আলী। ইতোমধ্যে কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেয়ে ব্যাপক গনসংযোগ শুরু করেছেন আবদুর রহমান বদি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহামন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী, আমাদের কাজ হল তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে বিজয়ী করে আনা। আগামী সংসদ নির্বাচনে জেলার ৪টি আসনই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চাই।
জেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, কেন্দ্র থেকে যা নির্দেশ দেওয়া হবে সেই অনুসারে কাজ করবে জেলা বিএনপি। এখন চেয়ারপার্সনের মুক্তির বাইরে আমরা কিছু ভাবছি না।
জানা যায়, প্রথম তত্বাবধায়ক সরকার গঠন হওয়ার পর অনুষ্ঠিত ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জেলার দুইটি আসনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। কক্সবাজার-২ আসনে বিজয়ী হন তৎকালীন ১৫ দলীয় জোট প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মোহাম্মদ ইসহাক। কক্সবাজার-৩ আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। কক্সবাজার-১ আসনে বিজয়ী হন জামায়াত মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক মঞ্জু ও কক্সবাজার-৪ আসনে বিজয়ী হন বিএনপি’র শাহজাহান চৌধুরী। ওই নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয় বিএনপি। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসন ছাড়াও অপর ৩টি আসনে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থীরা। এর আগে বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪টি আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি প্রার্থীরা। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও জেলার ৪টি আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি প্রার্থীরা। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জেলার ২টি আসনে বিএনপি একটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে বিজয়ী হন জামায়াত প্রার্থী। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩টিতে আওয়ামী লীগ ও ১টিতে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হন।
পাঠকের মতামত: